মা বলেছিলেন, কখনো পরনির্ভরশীল হয়ো না। কখনো কারও কাছে অনুগ্রহের হাত পেতো না। কখনো কারও কাছে ভিক্ষার হাত পেতো না। সৃষ্টিকর্তা কাউকে উপবাস রাখেন না। হয়তো দুই একদিন উপবাস রেখে তোমার পরীক্ষা নিবেন,তাই বলে তুমি না খেয়ে মরে যাবে না।
আর কে-বা অনুগ্রহ করবে আমাকে আল্লাহ ছাড়া। আমার তো স্বামী সন্তান কেউ নেই। আজ মায়ের উপদেশগুলো খুব মনে পড়ছে।
দুইদিন হলো আমার প্রিয়তম স্বামী শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করলেন। সংসার জীবনের এগারো বছর এক সাথে কাটিয়েছি। মানুষটা কখনো আমাকে দমক দিয়ে কথা বলেনি। যদিও স্ত্রী হিসেবে আমি তার সন্তানের মা হতে অক্ষম। তবুও টানাপোড়েনের সংসারে আমার সাথে রাগ করবে দূরে থাক, একটু উঁচু গলায় কথাও বলেনি। মানুষটা মনে হয়, ভালোবাসা ছাড়া কিছু জানতো না। নিজেকে নিঃস্ব মনে হচ্ছে। আর যাইহোক প্রিয় মানুষটার স্মৃতিবিজড়িত এই বসতভিটা আমি কখনো ত্যাগ করতে পারব না।
সম্পত্তি বলতে ছিলো ভিটেবাড়ি আর একটুকরো ফসলি জমি। যেটুকু চাষাবাদ করে কোনোক্রমে চলে যেত আমাদের টোনাটুনির সংসার। হাজারটা অভাব-অনটন থাকার পরেও উনি কখনো আমাকে পর্দা ত্যাগ করতে দেননি। আমিও দরিদ্রতা মুখ বুজে হজম করেছি। যতটুকু পারি পর্দার ভেতরে থেকে সাহায্য করার চেষ্টা করেছি।
উনি গত হওয়ার পর নিঃসঙ্গ হয়ে পরলেও উনার স্মৃতিচারণ আমাকে দৃঢ় বিশ্বাস যুগিয়েছে।
কারও কাছে হাত পাতার অভ্যাস মা শেখাননি।
জমি চাষাবাদ করার জন্য কাজের লোক নেওয়ার মতো সাধ্য আমার নেই। আবার সামান্য অর্থের জন্য পর্দা ত্যাগ করতে পারি না। তাই কখনো বা রাতের গভীরে, কখনো বা দিনের বেলা বোরকা পরিধান করে। জীবিকার তাগিদে করতে হয়েছে জমি চাষাবাদের কাজ।
হয়তো একটু কষ্ট হচ্ছে , তবুও বেশ ভালো আছি প্রিয় মানুষটার বসতভিটায় আছি।এখানে তার পাশে শেষ নিদ্রাটা হলে আমি চির ক্লান্তির ঘুম দিতে পারব। তার পাশেই থাকতেই চাই ইহলোকে ও পরলোকে।
স্মৃতিবিজড়িত বসতভিটা